ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে বলিউড …
|
এ মূহুরতে মুম্বাইের
ফ্ল্যাটে এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা। আর মস্তিষ্কে স্মৃতিচারন, নস্টালজিয়া অবশ্যই উপভোগ্য
যদিনা তাকে শব্দ সংখ্যায় বেঁধে পত্রিকার জন্য পাঠাতে হয়! আলস্য আর স্মৃতি রোমন্থন রাজযোটক
কিনা…
আমি সবসময়ই অভিনেত্রী হতে
চেয়েছিলাম আর বম্বে তে কাজ করতে চেয়েছিলাম, এডুকেশন সিস্টেমে বিশ্বাস ছিল তাই
ফিল্ম ইন্সটিটিউট, কিন্তু এত বড় পরম্পরার
ভাগীদার আমি, সেটা গিলতে আজও খাবি খাই! স্মৃতির সরণী বেয়ে চললে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফিল্ম ইন্সটিটিউটের গেট টা,
স্বপ্নমাখা সব চোখের প্রথম লাল সেলাম এর পয়লা হকদার।
আমার জীবনে
এফ-টি-আই-আই এক নাটকীয় মোড় এর সূচনা করেছিল, কলকাতা থেকে ছিটকে পুনে, মহারাষ্ট্র।
প্রথম বাড়ি থেকে বাইরে-হস্টেল জীবন, সিনেমা পরিবৃত পরিবেশ, সিনেমা দেখা-শোনা-বোঝা-খাওয়া-নিঃশ্বাস
নেওয়া। এ যেন এক স্বর্গ! আজ ফিরে তাকালে মনে হয় এফ-টি-আই-আই আর বম্বে র তুলনাটা
এক্কেবারে বাপের বাড়ি আর শশুরবাড়ীর মতোই। বাপের বাড়ী অনেক প্রটেক্টীভ সেখানে
বাস্তবের জমিনে পাও পড়তে নহি...যে গাছের নীচে শুধু ফুলের মত ছড়িয়ে থাকা সততই
সুন্দর স্মৃতি,আর শশুরবাড়ী শেখায় দুনিয়াদারি, শিখতে ভালো না লাগলেও না শিখে যে উপায়
নেই! তাই একজন মানুষের গ্রোথ এ দুটোর ভূমিকাই অপরিহার্য।
সারা ভারত এমনকি
বাইরে থেকেও ক্যানডিডেট রা
আবেদন করে, বলা ভাল “লড়ে” মাত্র কুড়ি টি সিট এর জন্যে। তার মধ্যে জেনারেল সিটের
সংখ্যা আসলে ১২!
ইন্সটিটিউটের
নির্বাচণী পরীক্ষা দিতে গিয়ে এমন পরীক্ষারথী ও দেখেছি যারা বছরের পর বছর পরীক্ষা
দিয়ে যায় শুধু মাত্র “একবার সিলেক্ট হবার জন্যে”। লিখিত ও মৌখিক এর পরে আমি
নির্বাচিত হলাম চার দিনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আকা ওয়ার্কশপ এর জন্য।
ওয়ার্কশপ
চলাকালীন আমরা পরিচিত হলাম “সৎসঙ্গ” এর সাথে– এটা নাকি ফিল্ম ইন্সটিটিউটের প্রাচীন
রেওয়াজ। আমার ফিল্ম ইন্সটিটিউটের জার্নিতে এই “সৎসঙ্গ” একটা খুব রংচঙে অধ্যায়।
“সৎসঙ্গ”--
শব্দটা শুনলেই ধুপ ধুনো, ভক্ত বেষ্টিত সাধু বাবা এবং পবিত্র পরিবেশের দৃশ্য ভেসে ওঠে। কিন্তু সিনিয়ারদের কথা মত রাত দশ টায় উইসডম ট্রি-র নীচে পৌঁছে দেখলাম এত নন্দী ভৃঙ্গীর
পরিবেশ! এবং র্যাগিং এর প্রস্তুতি নিতে গোঁফে তাঁ দিচ্ছেন তাঁরা! মনে পড়ল ওয়ার্কশপে সিলেক্ট হওয়ার পরে কলকাতার এক বন্ধু বলেছিল “ফিল্ম ইন্সটিটিউটের র্যাগিং টা মিস করিস না কিন্তু!
--সেই প্রথম “সখি র্যাগিং কাহারে কয়?’ সিনিয়ারদের
দাবড়ানি , ত্যাড়া ব্যাকা প্রশ্ন, তেরছা হাসি সবকিছু একেবারে দুম করে মোগলী কে শের খান
এর সামনে ফেলে দিয়েছিল। অবশ্য “র্যাগিং” এর চিত্রটা এখানে ছিল অন্যরকম, বোলে তো ইনটেলেকচুয়াল! ফিল্ম সমালোচনা , রিসার্চ
এর প্রয়োজনীয়তা, অভিনয় সংক্রানত চ্যালেঞ্জ, জীবন দর্শন, ক্রিয়েটিভ তর্কাতর্কি, হায়ারারকির
গুরুত্ব, ইমোশনাল ইণ্টেলেজেন্সির অ্যাপ্লিকেশন সবের আঁতুড়ঘর ছিল এই “সৎসঙ্গ”! আর এই নামগানের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে কখন যেন কলেজের সিনিয়ার জুনিয়র এর সম্পর্কটা
নিঃশব্দে একই পরিবারের গুরুভাই গুরুভগ্নির হয়ে দাঁড়াত…যারা অবশ্য এগুলো দেখতে পেত না
তারা নালিশ জানাত “র্যাগিং” এর নামে… ফিল্ম ইন্সটিটিউটের যেসব রথি মহারথী দের নাম
আপনি জানেন তাঁরা প্রায় প্র্যতেকেই সৎসঙ্গ করেছেন! আজকাল অবশ্য এই প্রচলন বন্ধ হয়ে
গেছে। আসলে ফিল্ম ইন্সটিটিউট টা কোন কলেজ নয়, এটা একটা পরিবার, আর আজ যদি জিজ্ঞাসা
করা হয় তাহলে বলব আমি সেখানে অভিনয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা নয় একটা “লাইফ চেঞ্জিং-লাইফ
টাইম এক্সপিরিএন্স” নিতে গিয়েছিলাম।
পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে সিলেকশনের প্রথম বার্তা-আমার জীবনের একটা ইউ টার্ন–মাত্র দশ পনেরো দিনের
নোটিসে শেকড় শিফট! আর ফার্স্ট ফুল টস – ভাষা বিপর্যয়–হিন্দি ও ইংরেজি!—অ্যাদ্দিন
জানতুম বলিউড ও একতা কপুরের দীক্ষায় হিন্দি টা আমার নখদর্পণে কিন্তু ফিল্ম
ইন্সটীঊটে এসে আবিষ্কার করলাম বাংলা মিডিয়ামের মেয়ের এক রামে রক্ষা নেই লক্ষণ
দোসর! শুধু ইংরেজি নয় হিন্দি টাও শুধরোতে হবে!
ওয়ারল্ড সিনেমার
হাতেখড়ি এফটিআইআই এর হাত ধরেই, কিন্তু মেয়ে সাব টাইটেল দেখবে না সিনেমা সেটা টস
করতে করতেই গেম ওভার। বুঝলাম হিন্দি ও ইঞ্জিরি টা না শুধরলেই নয়, স্কুলে
ওয়ার্ডসওয়ার্থ / শেলি / ও হেনরি র সাহিত্য গিলে আশি শতাংশ মার্কস আনা আর মৌখিক
ঝরনা ধারায় অনেক তফাৎ! অতঃকিম ভুলভাল গ্রামার, ফ্রেজ ইউজ করে, বন্ধুদের পার্সোনাল “লাফটার
চ্যালেঞ্জ শো ” হয়েও পিছু না হঠে আরও বেশি করে ইংরেজি সিনেমা দেখা, উর্দু তালিম
নেওয়া, হিন্দি মাতৃভাষীদের সাথে ওঠা বসা, দাঁতে পেন্সিল লাগিয়ে র-ও-ড় উচ্চারণে
ফারাক আনা ইত্যাদি। আজ যখন আমি হিন্দি বা ইংরেজিতে কথা বলি তখন মানুষ আমার বাংলা
নিয়ে সন্দেহ করে!
জীবনের প্রথম হস্টেল
লাইফ – বাড়ির নিরাপত্তা থেকে দূরে এক পাচঁমেশালি পরিবেশে পদে পদে রেষারেষি,
প্রতিযোগিতা, পি আর প্রেশার এর যাঁতাকলে পিষতে পিষতে মানুষের চরিত্রের বিচিত্রতা
বোঝা এবং প্রয়োজনানুসারে সেই সব নিরীক্ষণকে অভিনয়ে কাজে লাগানো শেখা! বহু প্রবাদ
প্রতিম হিন্দি ইংরেজি নাটকের/ ফিল্মের সাথে পরিচিত হওয়া তার পরোক্ষ ভাগীদার হওয়া-অভিনয়
নিয়ে পড়া শুরু করে আমি আদতে মানুষ এবং জীবনকে দেখার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার
করলাম; ফিল্ম বা অভিনয় তো আদতে মানুষ এবং জীবনেরই প্রতিফলন।
এই
দর্শনে অবশ্য মাস চলেনা, তাই ফিল্ম ইন্সটিটিউটে
পড়া কালীনই কাজ খোঁজা শুরু করে দিয়েছিলাম, একাধিক শর্ট ফিল্মে কাজ করেছিলাম, কখনো প্রয়াত
শ্রী টম অলটার স্যার এর সাথে সহ অভিনেতা হিসেবে তো কখনো নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ইন্সটিটিউটের
পরিচালনার স্টুডেন্ট দের ফিল্মে, যখন ক্লাস থাকত না তখন পুনে থেকে বম্বে অডিশন দিতে
যেতাম ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে। বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে পরিচয় সেই শুরু।
কলকাতার এক পরিচালকা মহাশয়া আমাকে তাঁর ফিল্মের জন্য ফাইনাল করলেন।
ইন্সটিটিউটের
কোর্স তখনও শেষ হয়নি, ছাত্রাবস্থায় থাকাকালীন প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা কারই বা থাকে ? তাই
নামমাত্র পারিশ্রমিকে এবং একটি “স্ক্রিন নেম” সহ শুটিং সেরে ফেললাম, জীবনের প্রথম ফিল্ম
শুটিং এর পাবলিসিটির শিহরন টের পেলাম যখন এক ঝাঁক ফটোগ্রাফার এর ফ্ল্যাশ এর মুখো মুখী
হলাম আর পরদিন আমার এক দাদা সক্কালবেলা ফোন করে বললেন “আজকের খবরের কাগজটা দ্যাখ!”
এই অভিজ্ঞতার ফার্স্ট হাফটা বেশ রূপকথা মার্কা লাগলেও সেকেন্ড হাফে আমাকে রিপ্লেস করে
দেওয়া হল কোন খবর না দিয়েই, এবং পারিশ্রমিকের সিকি না ঠেকিয়েই! নিজ পারিশ্রমিকের দাবি
করাতে ফি-তে হুমকিও পেতে হয়েছিল! কাজের সন্ধান এতে অবশ্য কোনোভাবেই আটকে থাকেনি। কিন্তু
কোর্স শেষ আর ইন্সটিটিউট থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে এসেছিল। পুনে থাকাকালীন মহাত্মা
ফুলে মিউজিয়মে “ঐক্যভারতী ইন্সিটিউটে” কিছু মারাঠি স্টুডেন্ট দের বাংলা পড়ানোর সুযোগ
পেয়েছিলাম, সেই প্রথম শিক্ষকতার স্বাদ, আমার ক্লাসে ১৬ থেকে ৬0 সকলেই ছিলেন তারা আজও আমায় “দিদিমণি” বলে
ডাকেন আর টিচার্স ডে তে ইউশ করেন! দাভেলি, মস্তানি,ল-কলেজ রোড, ই-স্কোয়ার,
হস্টেলের ছাদ আমি আজও খুব মিস করি।
পাততাড়ি গোটানোর সময়কালীন একটা অডিশনের খবর এল – একটা পিরিয়ডীকাল বাঙালী মেয়ের
চরিত্রের জন্য- ভোরবেলা উঠে পুনে বম্বে করে দিয়ে এলাম অডিশন। কদিন বাদেই ছিল বম্বে
শিফটিং…
ইয়ে হ্যায় মুম্বাই মেরি জান...
শুরু হল বলিউড
যাত্রা, শিখলাম চাঁদের সন্ধান পেতে প্রোডিউসারের অফিস কিন্তু তার আগে মাথার ওপর
ছাদের সন্ধান পেতে ব্রোকারের অফিসে ধর্না আগে দিতে হবে। জানলাম বাড়ি ভাড়া নিতে
গেলে বিবাহিত হতে হবে না হলে ভরসা যোগ্যর তকমা মেলা ভার। নভেম্বর ২0১১ সেদিন বম্বেতে আমি নতুন নেওয়া ভাড়া বাড়ির দেওয়াল
রং করছিলাম হঠাৎ ফোন এল-ওপ্রান্তে কাস্টিং ডিরেক্টর “ কনগ্র্যচুলেশনস শিরিন! আপ
ভিক্রমাদিত্য মোটোআনে কি আগলি ফিল্ম লুটেরা কে লিয়ে সিলেক্টেড হো।” মুম্বাই এর
প্রথম উপহার আমাকে... শুরু হয়ে গেল শুটিং এর প্রস্তুতি ...
অভিনেতার কাছে জীবনের
প্রথম ছবি র অভিজ্ঞতা প্রথম প্রেমের মতই, চাপা উত্তেজনা, এক্সট্রা কসাস, সর্বদাই
সেরা দেওয়ার প্রচেষ্টা... যাতে প্রেমিক/ প্রেমিকা বুঝতে পারে যে আপনি কতটা
সিন্সিয়ার আর ডেডিকেটেড! কিন্তু আপনার “পেয়ার কি খবর” বুঝতে দুনিয়ার বয়ে গ্যাছে।
লুটেরার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল, অনেক প্রফেশনালিজম ঠেকে শিখেছিও এই যাত্রায়,
ভিক্রমাদিত্যর মত আসাধারন পরিচালক, ফ্যান্টম এর মত ড্রিম টিম, রনভির-সোনাক্ষীর মত
দুর্দান্ত কো-স্টার... আর পেলাম কলকাতা, মুম্বাই, পুনে, দিল্লি, ব্যাঙ্গালর
এর-প্রিন্ট/ ইলেক্ট্রনিক/ রেডিও মিডিয়া থেকে অসংখ্য সাপোর্ট ও ভালবাসা- লুটেরার মত
বিগ বাজেট ছবিতে বাঙালি মেয়ের ডেবিউ বলে কথা! জীবনের প্রথম ছবির প্রিমিয়ার-রেড
কার্পেটের জন্য আমার বন্ধুকে দিয়ে একটা পোশাক বানালাম সেটা আজও আমার কার্বাডে
চুপচাপ শুয়ে আছে বিনা উদ্বোধনেই কারন কোনও অফিসিয়াল প্রিমিয়ার হয়নি, প্রথম স্ক্রিনিং
এ বসে চুপচাপ চোখের জল ফেললাম, ছবির প্রয়োজনে আমার চরিত্রকে অনেক ছাঁটতে হয়েছে।
অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমান করার সুযোগ না পেলেও একজন ফিল্ম ফ্রেটারনিটি হিসেবে
কিন্তু লুটেরার মত একটা ভাল ছবির অংশীদার হয়ে আমি সারাজীবন গর্ব বোধ করব। মিডিয়া
বন্ধুদের মধ্যে কিছু এমন জারনালিস্ট ও ছিলেন যারা আমার ইন্টারভিউ নেওয়ার পরেও
ছাপেন নি কারন আমি তাদের “গসিপ সাপ্লাই” দিতে পারিনি... নিজে এক্স জারনালিস্ট হয়েও
ইয়েলো জারনালিজম আমার কাছে অপরিচিত ছিল কিন্তু মুম্বাইকে সবে চেনা শুরু
করেছিলাম...
লুটেরা ডেবিউ
এর পরে বিভিন্ন বড় নামকরা মহল থেকে ডাক পেয়েছিলাম কিন্তু আমার ছাপোষা
মধ্যবিত্ততাকে ছাপিয়ে উঠতে আর পারলাম না। প্রতিদিন বেশ তৈরি হয়ে, প্রফুল্ল চিত্তে বেরতাম বিভিন্ন মিটিং এর জন্য আর মন খারাপ করে বাড়ি
ফিরতাম। আমার অভিনেতা বাবা অনেক বছর আগে আমাকে একটি উপদেশ দিয়েছিলেন যখন আমি ওনাকে
প্রথম জানালাম ‘আমি অভিনয় কে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই...’ উনি বলেছিলেন... “যে কাজ করতে মন সায় দেবে না
জানবে সেটা করার দরকারও নেই”। পরভিন দাব্বাসের বিপরীতে একটা ছবি করলাম “যব তুম
কহো”- ছবিটা একেবারেই চলল না। আনুরাগ বাসুর “টেগোর স্টোরি” তে কাবুলিওয়ালায় কাজ
করলাম। অনেক প্রশংসা পেলাম। স্ক্রিনে অভিনয়ের পাশাপাশি ডাবিং করতাম প্রচুর। কিন্তু
ফিল্মের প্রতি আমার ভালবাসা শুধু অভিনয়ে আটকে থাকেনি শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে পৌঁছে
গেছে আমার মতো আরও বহু ছোট শহরের স্বপ্নের কাছে।
২〇১৫ থেকে আমার
অভিনেতা তকমা স্নাতক হল অ্যাক্টিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে, প্রথমে একতা কপুরের
“ইন্সটিটিউট অফ ক্রিয়েটিভ এক্সিলেন্স” তারপরে সুভাষ ঘাই স্যারের “হুইস্লিং ঊডস
ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট”-- অভিনয় করার
পাশাপাশি অভিনয় পড়ানো এর মত ভালো যুগলবন্দী আর হয়না। ছাত্র ছাত্রীদেরকে শেখানোর
পাশাপাশি ওদের থেকেও শিখেছি অনেক কিছু। প্রথম যেদিন টিচার্স ডে তে কৃতজ্ঞতার
হাতগুলো আমায় প্রণাম করল সেদিন চমকে উঠেছিলাম, জানিনা আমি এর কতটা যোগ্য কিন্তু ...আমিও
ত একদিন ওদেরই জায়গায় ছিলাম। “ইন্সটিটিউট অফ ক্রিয়েটিভ এক্সিলেন্স”-এর পরে “হুইস্লিং
ঊডস ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউটে অভিনয় পড়ানোর পাশাপাশি সুভাষ ঘাই স্যারকে
অ্যাসিস্ট করাও শুরু করলাম। এবং মুক্তা আর্টস এ স্টোরি ডিপার্টমেন্টে প্রথমে ক্রিয়েটিভ
এক্সিকিউটীভ হিসেবে ও পরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ শুরু করলাম, ঝুলিতে আরেকটা
টাইটেল। কলকাতায় থাকাকালীন আমার জারনালিজম ও স্ক্রিপ্ট রাইটিং আর প্রোডাকশন হাউজে
কাজের অভিজ্ঞতাটাও স্নাতক হল, ফিল্ম বিসনেসের সাথে পরিচয় ঘটলো সরাসরি। ক্যামেরার
পেছনের কারসাজির সাথে পরিচয় ইন্সিটিউটে থাকতেই হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মুক্তা আর্টসে
কাজ করার এবং লিভিং লেজেন্ড সুভাষ ঘাই এর থেকে সরাসরি শিখতে পারা একটা লাইফটাইম
এক্সপিরিয়েন্স। এরই মধ্যে পরিচালক সঞ্জয় নাগ এর “গুডমর্নিং সান সাইন”
আমি
মুম্বাইকে শুধুমাত্র কাজ আর ফিল্মের গোনাগুনতিতে আটকে রাখতে চাইনা, আমার অন্যতম
প্রিয় শহর আমাকে প্রফেশনাল সম্মান এর থেকেও অনেক বেশি উপহার দিয়েছে। বহু মানুষকে
দেখেছি স্বপ্নের গোলাপি ফানুস ফুট তেই এ শহরকে গাল দিতে শুরু করে। আমি মুম্বাইকে
আজও ততটাই ভালোবাসি যতটা প্রথম দিন বাসতে শুরু করেছিলাম, কোথাও বোধহয় কলকাতার থেকে
একটু বেশিই! পরিবার থেকে দূরে, বন্ধুহীন শহরে শুধু স্বপ্নসম্বল নিয়ে শুরু করা এই
সফর কত কিছুই না দেখিয়েছে। শিখিয়েছে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ! শিখিয়েছে বাড়ির বিল
ভরতে হলে স্বপ্নকে অনেকসময় হোল্ডে রাখতে হয়.. বা “পরের ফিল্ম কবে রিলিজ হচ্ছে”-র সামাজিক
চাপ সামলে কছুয়া আর খরগোশের অসম লড়াইতে স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট কিভাবে মেন্টেন করে
যেতে হয়। শিখেছি জীবনে ২৬/১১-র আচমকা হামলা স্বত্তেও কিভাবে পরদিন ফুসফুসে সাহস
ভরে লোকাল ধরতে ছুটতে হয়!
--- স্বচ্ছতা সঞ্জীবন গুহ