Sunday, 23 December 2018

প্রিয় পৌলমী দি…

প্রিয় পৌলমী দি
সে অনেককাল আগের কথা -তখন ইয়াহু আর রেডিফ মেল এর জমানা,
নতুন নতুন ইন্টারনেট এর চলন আর ইয়াহু মেসেঞ্জার এর চ্যাট বাক্স তো রীতিমতো পদী পিসী ও প্যাণ্ডোরা কে কমপ্লেক্স গুঁতোচ্ছে! ইমেল চেক করতে ক্যাফে তে যাওয়া একটা রাষ্ট্রীয় কর্তব্যের মধ্যে ধার্য করতাম। এমনি এক দিনে আমার মেল বাক্সে “উনিশ কুড়ি”-র রিপ্লাই আবিষ্কার করলাম–অভিনেতা জিত কে নিয়ে সংখ্যা র জন্য পাঠানো অনুরোধের ছোট্টো দু শব্দের প্রত্তুত্তরপ্রিয় ম্যাগাজিনের থেকে “মেঘ না চাইতেই জল পাওয়া”র সেই মহা মুহূর্ত এক মফস্বলের বাংলা মিডিয়ামের বালার কাছে ক্লাঊড নাইন বইকি ! পৌলমী দি র সাথে আলাপের এটাই প্রথম সিন।

ইমেল ইমেল বেশ চলছিল - কখনো বিশেষ সংখ্যার আবদার তো কখনো সমালোচনা...চিঠি পাঠানো শুরু করলাম –ছাপাও হল! সেকি উল্লাস ! ছাপা অক্ষরে নিজের নাম প্রথমবার দেখা!
হাই স্কুলের “লাল ফিতে সাদা মোজা” তখন স্কুল সেলেব! প্রথম প্রথম পৌলমী দি নিজে ফোন করতেন সদ্য প্রকাশিত সংখ্যা র ফিডব্যাক নিতে, সহজ ভাবে মন খুলে পূণখ্যাণুপূখ্য মতামত ব্যক্ত করতাম। মনে আছে -- উনিশ কুড়ির রিডার্স মিটে র পরদিন পৌলমী দিকে ফোন করতেই উনি বললেন “তুমি তো সব্বাইকে একেবারে ইমপ্রেস করে দিয়েছ! আমরা তোমার কথাই বলছিলাম যে কত গুছিয়ে মেয়েটা নিজের বক্তব্য সামনে রাখে ।” ফোনের ওপারে আমি তখন এম্ব্যারেসড আমার জীবনের অন্যতম সেরা কমপ্লিমেন্ট পেয়ে!   

আমার কেরিয়ার এর সূত্রপাত এবং মিডিয়ায় হাতে খড়ি পৌলমী দির হাত ধরেই। অনেককিছু শিখিয়েছিলেন তিনি কখনো বলে, কখনো না বলে। আমার লেখা কোনোদিন স্কুলের ম্যাগাজিনেও ছাপা হয়নি তাই “ইছাপুরের অ্যানা ফ্রাঙ্ক” সীমাবদ্ধ ছিল কেবল তার  “কিটি”তেই। বাবার উৎসাহ আর পৌলমী দির দৌলতেই একটা সর্ব ভারতীয় ম্যগাজিনে নিজেকে দেখতে পেয়েছিলাম।

উনিশ কুড়ি র পাঠক থেকে লেখিকায় তবদিল হতে বেশি সময় লাগল না। একদিন ফোনে সাহস করে বলে বসলাম “হ্যাং আউট” নিয়ে লেখা পাঠাব ? দিদি বললেন –পাঠাও।” সেই শুরু –মাসের ৪ ও ১৯ তারিখ তখন জীবনে এক বিশেষ স্থান অধিকার করিল ! ৬ নম্বর প্রফুল্ল চন্দ্র স্ট্রিট পরিচিত এলাকায় পরিণত হইয়া উঠিল,কাগজে কলমে হাতে লেখা আর্টিকল কখনো পোষ্ট করিয়াছি কখনো বা নিজ হাতে জমা দিয়া আসিয়াছি। একদিন দিদিকে শুধাইলাম- লেখা পড়িয়াছেন? কেমন লাগিল ?
পৌলমী দি-“ভালোই লিখেছ, কিন্তু লেখা গুলো একটু সাহিত্য ধরনের...
বাংলা মিডিয়াম নড়ে চরে বসল- “মানে ?”  
পৌলমী দি- “মানে ম্যাগাজিনের জন্য ভাষাটা একটু মুচ মুচে করতে জানতে হবে ।”
মুচমুচে বাংলা শিখতে বাংলা মিডিয়ামের বেশি সময় লাগল না অবশ্য। সহজ চলতি ভাষাকে ভর করে বাংলার বয়ঃসন্ধিদের কাছে পৌঁছে যেতে চেয়েছিলেন পৌলমী দি।

“উনিশ কুড়ি” আমি ও আমাদের অনেকের জীবনেরই একটা টার্নিং পয়েন্ট নিঃসন্দেহে, কিন্তু আজ এই লেখাটা লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে যে শুধু পৌলমী দিই আমাদের জীবনের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট ও কেরিয়ারের গোরাপত্তনাধিকারিনী। প্রথম চেক টা যেদিন পোস্টে হাতে পেলাম সেদিন খুব হতবাক হয়ে প্রফেশনাল গাড়লের মত পৌলমী দিকে ফোন করলাম—
পৌলমী দি- “বলো...”
আমি- এ...এ...এটা কি একটা চেক এসেছে আমার নাম লেখা আছে, কেন বুঝতে পারছিনা...
পৌলমী দি- (কিঞ্চিৎ বিরক্ত) হ্যাঁ তো ...না বোঝার কি হয়েছে !
আমি- ও... আচ্ছা ! (ফোন কাট)  
কনফার্ম হল আমি একটা চেক নয় একটা অফিশিয়াল পদবীও পেলাম–
“ফ্রিলান্স জারনালিস্ট” এর!
বলা বাহুল্য আমি যে চ্যারিটি করছিলাম সে খবর জানতে আনন্দ বাজার পিছিয়ে পড়েছিল!
এদিকে আমার লোভ বাড়ছিল....
টাকার নয় ...লেখার! “উনিশ কুড়ি”- র বিভিন্ন কলামে নিজের লেখা সাজানোর। তো একবার উনিশ কুড়ির-গসিপ কলাম লিখিতে গিয়া গসিপ কম পরিয়াছিল- আগেই বলেছি তখন ইন্টার নেটের এত সিক্স প্যাক  ছিলোনা, আমি সোজা “আনন্দলোক” এর গসিপ কলাম থেকে ঝেড়ে টুকে দিলাম। পৌলমী দির ডাক পড়ল, গেলাম- আমাকে সমানে বসিয়ে দুটো ম্যাগাজিন  পাশাপাশি রেখে মুচকি হেসে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বললেন –“স্বচ্ছতোয়া, ‘চুরিবিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড় ধরা’ –নকল করাটাও একটা আর্ট...নকল আর ইন্সপিরেশনের মধ্যে ফারাকটা বোঝো!”  ভুলতে পারবনা কোনোদিন ।

একটা যা তা ঘটনার কথা না বললেই নয়...
তখন আমি কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে- জনৈক এক পরিচালকা মহাশয়ার ইনটারভিউ নিয়েছিলাম। ছাপার পর যখন ফোন করলাম ওনাকে, উনি ফোনে যাচ্ছেতাই ভাবে চেঁচিয়ে উঠলেন কিছু ভুল তথ্য ছাপার কারনে- স্বীকার করতে আপত্তি নেই ভুল টা আমারই ছিল। যাইহোক উনি বিশ্রী ভাবে রিয়্যক্ট করলেন এবং হুমকি দিলেন আনন্দ বাজারে ফোন করে আমার নামে কমপ্লেন করবেন। এহেন কেস খওয়া আমার জীবনে প্রথম! ইজ্জত কা সওয়াল হ্যায় আফটার অল...তাই যাতে কোন ভুল বোঝাবুঝি না হয়  তাই ভাবলাম পৌলমী দি র সাথে দেখা করে ব্যাপারটা জানাবো। এবিপি র অফিসে ড্রপ করতে আমার এক দাদা আর  তৎকালীন বয়ফ্রেন্ড এসেছিল, হাতে একটু সময় ছিল তাই এবিপির পাশেই একটা রেস্তরাঁয় আমরা বসলাম। আসন্ন ঝাড়ের ভয়ে নার্ভাসনেস আর টেনশনে আমার তখন অবস্থা টাইট। আমার শুভাকাঙ্ক্ষীরা আমার কেস জন্ডিস দেখে আমায় মরাল সাপোর্ট এর পাশাপাশি কারনসুধা অফার করল। বলল- “চুপচাপ খেয়ে নে দেখবি তোর পৌলমী দির সামনে ফুল কনফিডেন্ট ফিল করবি, ভয় ডর কেটে যাবে!” সেই প্রথম সুরা পান আমার জীবনে আর সেও এমন চাপের পরিস্থিতিতে!!! তেতো পানীয় দু পাত্তর পানের পর আমার ঘুম পেতে  লাগল...বন্ধুবরেরা প্রমাদ গুনল বলল “হ্যাঁরে তুই যেতে পারবি ত? আমরা নিচেই অপেক্ষা করছি নাহয়।” হাল্কা হাল্কা সুরুর নিয়ে আমি বসের দোরগোড়ায় উপস্থিত হলাম নিজের ছড়ানো রায়তা নিয়ে ডিসকাস করতে! যখন বেরলাম মিটিং শেষে তখন আমার “সুরুর” উড়ে গ্যাছে বলাকা হয়ে! দুই লাল কান দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে! কেঁদে কেটে একসা! সলিড ঝাড় এর ফুলপ্রুফ!
আমাকে বকে ওনারই পরে মন খারাপ হয়েছিল কিনা কে জানে পরবর্তীকালে এই নির্দিষ্ট ইন্টারভিউ সম্পর্কে উনি বলেছিলেন “সবাই ইন্টারভিউ নেওয়ার যোগ্য হয়না স্বচ্ছতোয়া, তুমি ভাউচ করলে বলে আমি নিতে দিলাম।”
আরেক মহিলা সেলিব্রিটির কথা মনে পড়ছে, ইন্টারভিউয়ের জন্য অ্যাপ্রোচ মাত্র উনি আমাকে এক পাঁচ তারা হোটেল এ দেখা করতে বললেন। হোটেল মানেই হস্পিটালিটি! একে ফ্রিলান্সার তায় কলেজ স্টুডেণ্ট! বিল গোনার আগে প্রমাদ গুনলাম- ভরসা বিগ বস! বললেন –“হ্যাঁ হোটেলে গেলে তোমাকেই বিল দিতে হবে! এক কাজ কর একে আর ফোন করার দরকার নেই যত্তসব লোভী লোকজন!” যেমন বলা তেমনি কাজ!

উনিশ বছরের জন্মদিনে এবিপি তে লেখা জমা দিতে গিয়েছিলাম। ফোনে মজা করে বলেছিলাম “উনিশ বছরের জন্মদিনে, উনিশ কুড়ির জন্য লেখা “উনিশ কুড়ি”তে জমা দিতে আসবো!” অফিসে গিয়ে লেখা জমা দেওয়ার পর ডেস্ক থেকে বেরিয়ে এল একটা গিফট বক্স আর চকোলেট! আমি ত আত্মহারা! গিফট বক্স থেকে বেরিয়ে এল একটা কাঠের তিন পাল্লার ফোটোফ্রেম! পৌলমী দি বললেন “এতে তোমার নানা মুহূর্ত সাজিয়ে রেখো আর চকোলেট টা খেয়ো কিন্তু।” উনি হয়ত ভেবেছিলেন যে আমি ডায়েট কন্সাস টিণেজার! যাইহোক ফ্রেম টা আজও আমার নানা মুহূর্ত কাঁধে নিয়ে আমার মুম্বাইয়ের বসবার ঘরে বিরাজমান। পৌলমী দির জন্মদিনে আমি একটা জাম্বো কোলাজ কার্ড বানিয়ে উপহার দিয়েছিলাম। শুধু উনিশ-কুড়ি র নানা বিভাগের নাম আর পৌলমী দির লেখা নানা কবিতার নামের মিশ্রণে একটা শুভেচ্ছাবার্তা। ভীষণ ইম্প্রেসড হয়েছিলেন। বলেছিলেন- “ আমি ভাবতেই পারিনি তুমি এত সুন্দর একটা কার্ড বানাবে!”
ভৌগোলীক দূরত্ব বাড়লেও সবসময়ই জন্মদিনে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছি। উনিও পাঠিয়েছেন কখনো কখনো, কিন্তু সেই উনিশ বছরের জন্মদিনের সারপ্রাইজ খুব স্পেশাল ছিল। ২ বছর আগে ডায়রিতে লেখা সেই কথা আর সেই ফোটো ফ্রেমের ছবি তুলে পৌলমীদিকে ওনার জন্মদিনে পাঠালাম। লিখলাম –“আজও অমলিন” প্রত্তুত্তর এল- “ কি বলব ... ভীষণ ভালো লাগছে, তুমিও ভালো থেকো।” সম্প্রতি জেনেছি যে উনি চিকিৎসার জন্য মুম্বাই আসতেন –ঘুণাক্ষরেও যদি জানতাম উনি কি অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন...। এমন অদৃষ্ট! কিছুই জানতে পারিনি।   

সবসময়ই নানা ভাবে অ্যাপ্রিশিয়েট করে গ্যাছেন জীবণের নানা ওঠা পড়ায় -প্রথম ফিল্ম “লুটেরা” রিলিজের আগে জানিয়েছিলেন-“ঊই আর হ্যাপি ফর ইউ, উই আর প্রাউড অফ ইউ।” কবিতা পাঠিয়েছি –পড়েছেন, বলেছিলেন –দেশ বা সানন্দায় পাঠানোর জন্য। আমি এতেই খুশি ছিলাম যে পৌলমী দির ভালো লেগেছে।
   
শেষ চিঠি ...  
“প্রিয় পৌলমী দি”-সবসময় এই নামেই সমস্ত মেল/ ইমেলে সম্বোধন করেছি ওনাকে, মা-মাসি-দিদিমনি দের বাইরে আমার জীবনে উনি এমন এক চরিত্র ছিলেন যার কাছে প্রফেশনালিজম, বকা, প্রশ্রয়, সাপোর্ট পেয়েছি। প্রথমবার "আপনি কি সেই স্বচ্ছতোয়া গুহ যিনি উনিশ কুড়ি তে লেখেন ?” বা প্রথম অটোগ্রাফ দেওয়া লেখিকা হিসেবে, প্রথম সেলিব্রিটি জগতে প্রবেশ করা- আমার জীবনের অনেক অসাধারণ এবং প্রথমের কারন হলেন পৌলমী সেনগুপ্ত। যারা আমাদের প্রতি বিশ্বাস করেন ভরসা রাখেন দুনিয়াকে প্রমান করার আগেই-উনি আমার জীবনে এমনই এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, বাবা মা র পাশাপাশি যাঁদেরকে নিজের জন্য গর্ববোধ করাতে চাইতাম উনি তাঁদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন। কলেজে থাকতে আমাকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলেন ভবিষ্যতে কি হতে চাই আমি বলেছিলাম–অ্যাক্টর-ডিরেক্টর, রেগে গিয়েছিলেন। লেখিকা বা সাংবাদিক বললে হয়ত খুশি হতেন সেই মুহূর্তে। আমার উচ্চ মধ্যমিকের রেজাল্ট জানার জন্য নিজে ফোন করেছিলেম, সেকেন্ড ডিভিশন পেয়ে আমি কাঁদছিলাম – উনি বলেছিলেন “কান্নার কিচ্ছু হয়নি স্বচ্ছতোয়া, জীবনটা অনেক বড়।”
আমি যে ওনার চোখে “সম্ভাবনাপূর্ণ” তা জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে ওনার সস্নেহ সহযোগিতায় টের পেয়েছি। আনন্দবাজার থেকে বরাবরই অনেক এক্সপোজার পেয়েছি পাঠিকা, লেখিকা, অভিনেত্রী হিসেবে-আর তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।  

এক অদ্ভুত স্রদ্ধাসমীহজুক্ত ভালোবাসা ছিল ওনার প্রতি, প্রনাম করতে গেলে প্রনাম করতে দিতেন না। সময়ের সাথে সাথে হায়ারারকি ও তরল হয় তাই বহুদিনের ইচ্ছে ছিল একটা হালকা আড্ডা আর একসাথে একটা ছবি তোলার- আর হল না, হবেও না।

কত স্মৃতি আজ হাতড়াচ্ছি, খুব কষ্ট হচ্ছে। মৃত্যু সংবাদ শুনে অবশ হয়ে গিয়েছিলাম-কাঁদিনি-আজ আর পারছিনা। এই লেখাটা লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে স্বরণ বা স্রদ্ধাজলি জীবদ্দশাতেই হওয়া উচিত। আমার জীবনের প্রথম বস, প্রিয় দিদি- সবসময় দূর থেকেই সমীহ করেছি, কৃতজ্ঞ থেকেছি, আজ সবাই এই লেখাটা পড়বে,জানবে শুধু পৌলমী দি ছাড়া।
  
-----  “গ্রহণ করেছ যত ... ঋণী তত করেছ আমায়  
.......................হে বন্ধু বিদায়.....................।।”

--- স্বচ্ছতা সঞ্জীবন গুহ


Saturday, 22 September 2018

ফিল্ম ইন্সটিটিউট থেকে বলিউড …

ফিল্ম ইন্সটিটিউট  থেকে   বলিউড

এ মূহুরতে মুম্বাইের ফ্ল্যাটে এক বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যা। আর মস্তিষ্কে স্মৃতিচারন, নস্টালজিয়া অবশ্যই উপভোগ্য যদিনা তাকে শব্দ সংখ্যায় বেঁধে পত্রিকার জন্য পাঠাতে হয়! আলস্য আর স্মৃতি রোমন্থন রাজযোটক কিনা…

আমি সবসময়ই অভিনেত্রী হতে চেয়েছিলাম আর বম্বে তে কাজ করতে চেয়েছিলাম, এডুকেশন সিস্টেমে বিশ্বাস ছিল তাই ফিল্ম ইন্সটিটিউট, কিন্তু এত বড়  পরম্পরার ভাগীদার আমি, সেটা গিলতে আজও খাবি খাই! স্মৃতির সরণী বেয়ে চললে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ফিল্ম ইন্সটিটিউটের গেট টা, স্বপ্নমাখা সব চোখের প্রথম লাল সেলাম এর পয়লা হকদার।  

আমার জীবনে এফ-টি-আই-আই এক নাটকীয় মোড় এর সূচনা করেছিল, কলকাতা থেকে ছিটকে পুনে, মহারাষ্ট্র। প্রথম বাড়ি থেকে বাইরে-হস্টেল জীবন, সিনেমা পরিবৃত পরিবেশ, সিনেমা দেখা-শোনা-বোঝা-খাওয়া-নিঃশ্বাস নেওয়া। এ যেন এক স্বর্গ! আজ ফিরে তাকালে মনে হয় এফ-টি-আই-আই আর বম্বে র তুলনাটা এক্কেবারে বাপের বাড়ি আর শশুরবাড়ীর মতোই। বাপের বাড়ী অনেক প্রটেক্টীভ সেখানে বাস্তবের জমিনে পাও পড়তে নহি...যে গাছের নীচে শুধু ফুলের মত ছড়িয়ে থাকা সততই সুন্দর স্মৃতি,আর শশুরবাড়ী শেখায় দুনিয়াদারি, শিখতে ভালো না লাগলেও না শিখে যে উপায় নেই! তাই একজন মানুষের গ্রোথ এ দুটোর ভূমিকাই অপরিহার্য।  

সারা ভারত এমনকি বাইরে থেকেও ক্যানডিডেট রা আবেদন করে, বলা ভাল “লড়ে” মাত্র কুড়ি টি সিট এর জন্যে। তার মধ্যে জেনারেল সিটের সংখ্যা আসলে ১২!  
ইন্সটিটিউটের নির্বাচণী পরীক্ষা দিতে গিয়ে এমন পরীক্ষারথী ও দেখেছি যারা বছরের পর বছর পরীক্ষা দিয়ে যায় শুধু মাত্র “একবার সিলেক্ট হবার জন্যে”। লিখিত ও মৌখিক এর পরে আমি নির্বাচিত হলাম চার দিনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া আকা ওয়ার্কশপ এর জন্য।
ওয়ার্কশপ চলাকালীন আমরা পরিচিত হলাম “সৎসঙ্গ” এর সাথে– এটা নাকি ফিল্ম ইন্সটিটিউটের প্রাচীন রেওয়াজ। আমার ফিল্ম ইন্সটিটিউটের জার্নিতে এই “সৎসঙ্গ” একটা খুব রংচঙে অধ্যায়।


 “সৎসঙ্গ”-- 

শব্দটা শুনলেই ধুপ ধুনো, ভক্ত বেষ্টিত সাধু বাবা এবং পবিত্র পরিবেশের দৃশ্য ভেসে ওঠে। কিন্তু সিনিয়ারদের কথা মত রাত দশ টায় উইসডম ট্রি-র নীচে পৌঁছে দেখলাম এত নন্দী ভৃঙ্গীর পরিবেশ! এবং র‍্যাগিং এর প্রস্তুতি নিতে গোঁফে তাঁ দিচ্ছেন তাঁরা! মনে পড়ল ওয়ার্কশপে সিলেক্ট হওয়ার পরে  কলকাতার এক বন্ধু বলেছিল “ফিল্ম ইন্সটিটিউটের র‍্যাগিং টা মিস করিস না কিন্তু! --সেই প্রথম “সখি র‍্যাগিং কাহারে কয়?’  সিনিয়ারদের দাবড়ানি , ত্যাড়া ব্যাকা প্রশ্ন, তেরছা হাসি সবকিছু একেবারে দুম করে মোগলী কে শের খান এর সামনে ফেলে দিয়েছিল। অবশ্য “র‍্যাগিং” এর চিত্রটা এখানে ছিল অন্যরকম,  বোলে তো ইনটেলেকচুয়াল! ফিল্ম সমালোচনা , রিসার্চ এর প্রয়োজনীয়তা, অভিনয় সংক্রানত চ্যালেঞ্জ, জীবন দর্শন, ক্রিয়েটিভ তর্কাতর্কি, হায়ারারকির গুরুত্ব, ইমোশনাল ইণ্টেলেজেন্সির অ্যাপ্লিকেশন সবের আঁতুড়ঘর ছিল এই “সৎসঙ্গ”! আর এই নামগানের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে কখন যেন কলেজের সিনিয়ার জুনিয়র এর সম্পর্কটা নিঃশব্দে একই পরিবারের গুরুভাই গুরুভগ্নির হয়ে দাঁড়াত…যারা অবশ্য এগুলো দেখতে পেত না তারা নালিশ জানাত “র‍্যাগিং” এর নামে… ফিল্ম ইন্সটিটিউটের যেসব রথি মহারথী দের নাম আপনি জানেন তাঁরা প্রায় প্র্যতেকেই সৎসঙ্গ করেছেন! আজকাল অবশ্য এই প্রচলন বন্ধ হয়ে গেছে। আসলে ফিল্ম ইন্সটিটিউট টা কোন কলেজ নয়, এটা একটা পরিবার, আর আজ যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে বলব আমি সেখানে অভিনয়ে পোস্ট  গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা নয় একটা “লাইফ চেঞ্জিং-লাইফ টাইম এক্সপিরিএন্স” নিতে গিয়েছিলাম।  

পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটে সিলেকশনের প্রথম বার্তা-আমার জীবনের একটা ইউ টার্ন–মাত্র দশ পনেরো দিনের নোটিসে শেকড় শিফট! আর ফার্স্ট ফুল টস – ভাষা বিপর্যয়–হিন্দি ও ইংরেজি!—অ্যাদ্দিন জানতুম বলিউড ও একতা কপুরের দীক্ষায় হিন্দি টা আমার নখদর্পণে কিন্তু ফিল্ম ইন্সটীঊটে এসে আবিষ্কার করলাম বাংলা মিডিয়ামের মেয়ের এক রামে রক্ষা নেই লক্ষণ দোসর! শুধু ইংরেজি নয় হিন্দি টাও শুধরোতে হবে!
ওয়ারল্ড সিনেমার হাতেখড়ি এফটিআইআই এর হাত ধরেই, কিন্তু মেয়ে সাব টাইটেল দেখবে না সিনেমা সেটা টস করতে করতেই গেম ওভার। বুঝলাম হিন্দি ও ইঞ্জিরি টা না শুধরলেই নয়, স্কুলে ওয়ার্ডসওয়ার্থ / শেলি / ও হেনরি র সাহিত্য গিলে আশি শতাংশ মার্কস আনা আর মৌখিক ঝরনা ধারায় অনেক তফাৎ! অতঃকিম ভুলভাল গ্রামার, ফ্রেজ ইউজ করে, বন্ধুদের পার্সোনাল “লাফটার চ্যালেঞ্জ শো ” হয়েও পিছু না হঠে আরও বেশি করে ইংরেজি সিনেমা দেখা, উর্দু তালিম নেওয়া, হিন্দি মাতৃভাষীদের সাথে ওঠা বসা, দাঁতে পেন্সিল লাগিয়ে র-ও-ড় উচ্চারণে ফারাক আনা ইত্যাদি। আজ যখন আমি হিন্দি বা ইংরেজিতে কথা বলি তখন মানুষ আমার বাংলা নিয়ে সন্দেহ করে!
জীবনের প্রথম হস্টেল লাইফ – বাড়ির নিরাপত্তা থেকে দূরে এক পাচঁমেশালি পরিবেশে পদে পদে রেষারেষি, প্রতিযোগিতা, পি আর প্রেশার এর যাঁতাকলে পিষতে পিষতে মানুষের চরিত্রের বিচিত্রতা বোঝা এবং প্রয়োজনানুসারে সেই সব নিরীক্ষণকে অভিনয়ে কাজে লাগানো শেখা! বহু প্রবাদ প্রতিম হিন্দি ইংরেজি নাটকের/ ফিল্মের সাথে পরিচিত হওয়া তার পরোক্ষ ভাগীদার হওয়া-অভিনয় নিয়ে পড়া শুরু করে আমি আদতে মানুষ এবং জীবনকে দেখার এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আবিষ্কার করলাম; ফিল্ম বা অভিনয় তো আদতে মানুষ এবং জীবনেরই প্রতিফলন।

এই দর্শনে অবশ্য মাস চলেনা, তাই ফিল্ম ইন্সটিটিউটে পড়া কালীনই কাজ খোঁজা শুরু করে দিয়েছিলাম, একাধিক শর্ট ফিল্মে কাজ করেছিলাম, কখনো প্রয়াত শ্রী টম অলটার স্যার এর সাথে সহ অভিনেতা হিসেবে তো কখনো নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ইন্সটিটিউটের পরিচালনার স্টুডেন্ট দের ফিল্মে, যখন ক্লাস থাকত না তখন পুনে থেকে বম্বে অডিশন দিতে যেতাম ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করে। বম্বে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সাথে পরিচয় সেই শুরু।
কলকাতার এক পরিচালকা মহাশয়া আমাকে তাঁর ফিল্মের জন্য ফাইনাল করলেন। 

ইন্সটিটিউটের কোর্স তখনও শেষ হয়নি, ছাত্রাবস্থায় থাকাকালীন প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা কারই বা থাকে ? তাই নামমাত্র পারিশ্রমিকে এবং একটি “স্ক্রিন নেম” সহ শুটিং সেরে ফেললাম, জীবনের প্রথম ফিল্ম শুটিং এর পাবলিসিটির শিহরন টের পেলাম যখন এক ঝাঁক ফটোগ্রাফার এর ফ্ল্যাশ এর মুখো মুখী হলাম আর পরদিন আমার এক দাদা সক্কালবেলা ফোন করে বললেন “আজকের খবরের কাগজটা দ্যাখ!” এই অভিজ্ঞতার ফার্স্ট হাফটা বেশ রূপকথা মার্কা লাগলেও সেকেন্ড হাফে আমাকে রিপ্লেস করে দেওয়া হল কোন খবর না দিয়েই, এবং পারিশ্রমিকের সিকি না ঠেকিয়েই! নিজ পারিশ্রমিকের দাবি করাতে ফি-তে হুমকিও পেতে হয়েছিল! কাজের সন্ধান এতে অবশ্য কোনোভাবেই আটকে থাকেনি। কিন্তু কোর্স শেষ আর ইন্সটিটিউট থেকে বিদায় নেওয়ার সময় হয়ে এসেছিল। পুনে থাকাকালীন মহাত্মা ফুলে মিউজিয়মে “ঐক্যভারতী ইন্সিটিউটে” কিছু মারাঠি স্টুডেন্ট দের বাংলা পড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম, সেই প্রথম শিক্ষকতার স্বাদ, আমার ক্লাসে ১৬ থেকে ৬0 সকলেই ছিলেন তারা আজও আমায় “দিদিমণি” বলে ডাকেন আর টিচার্স ডে তে ইউশ করেন! দাভেলি, মস্তানি,ল-কলেজ রোড, ই-স্কোয়ার, হস্টেলের ছাদ আমি আজও খুব মিস করি।

পাততাড়ি গোটানোর সময়কালীন একটা অডিশনের খবর এল – একটা পিরিয়ডীকাল বাঙালী মেয়ের চরিত্রের জন্য- ভোরবেলা উঠে পুনে বম্বে করে দিয়ে এলাম অডিশন। কদিন বাদেই ছিল বম্বে শিফটিং…

ইয়ে হ্যায় মুম্বাই মেরি জান...

শুরু হল বলিউড যাত্রা, শিখলাম চাঁদের সন্ধান পেতে প্রোডিউসারের অফিস কিন্তু তার আগে মাথার ওপর ছাদের সন্ধান পেতে ব্রোকারের অফিসে ধর্না আগে দিতে হবে। জানলাম বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে বিবাহিত হতে হবে না হলে ভরসা যোগ্যর তকমা মেলা ভার। নভেম্বর ২0১১ সেদিন বম্বেতে আমি নতুন নেওয়া ভাড়া বাড়ির দেওয়াল রং করছিলাম হঠাৎ ফোন এল-ওপ্রান্তে কাস্টিং ডিরেক্টর “ কনগ্র্যচুলেশনস শিরিন! আপ ভিক্রমাদিত্য মোটোআনে কি আগলি ফিল্ম লুটেরা কে লিয়ে সিলেক্টেড হো।” মুম্বাই এর প্রথম উপহার আমাকে... শুরু হয়ে গেল শুটিং এর প্রস্তুতি ...

অভিনেতার কাছে জীবনের প্রথম ছবি র অভিজ্ঞতা প্রথম প্রেমের মতই, চাপা উত্তেজনা, এক্সট্রা কসাস, সর্বদাই সেরা দেওয়ার প্রচেষ্টা... যাতে প্রেমিক/ প্রেমিকা বুঝতে পারে যে আপনি কতটা সিন্সিয়ার আর ডেডিকেটেড! কিন্তু আপনার “পেয়ার কি খবর” বুঝতে দুনিয়ার বয়ে গ্যাছে। লুটেরার অভিজ্ঞতা আমার জীবনে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল, অনেক  প্রফেশনালিজম ঠেকে শিখেছিও এই যাত্রায়, ভিক্রমাদিত্যর মত আসাধারন পরিচালক, ফ্যান্টম এর মত ড্রিম টিম, রনভির-সোনাক্ষীর মত দুর্দান্ত কো-স্টার... আর পেলাম কলকাতা, মুম্বাই, পুনে, দিল্লি, ব্যাঙ্গালর এর-প্রিন্ট/ ইলেক্ট্রনিক/ রেডিও মিডিয়া থেকে অসংখ্য সাপোর্ট ও ভালবাসা- লুটেরার মত বিগ বাজেট ছবিতে বাঙালি মেয়ের ডেবিউ বলে কথা! জীবনের প্রথম ছবির প্রিমিয়ার-রেড কার্পেটের জন্য আমার বন্ধুকে দিয়ে একটা পোশাক বানালাম সেটা আজও আমার কার্বাডে চুপচাপ শুয়ে আছে বিনা উদ্বোধনেই কারন কোনও অফিসিয়াল প্রিমিয়ার হয়নি, প্রথম স্ক্রিনিং এ বসে চুপচাপ চোখের জল ফেললাম, ছবির প্রয়োজনে আমার চরিত্রকে অনেক ছাঁটতে হয়েছে। অভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রমান করার সুযোগ না পেলেও একজন ফিল্ম ফ্রেটারনিটি হিসেবে কিন্তু লুটেরার মত একটা ভাল ছবির অংশীদার হয়ে আমি সারাজীবন গর্ব বোধ করব। মিডিয়া বন্ধুদের মধ্যে কিছু এমন জারনালিস্ট ও ছিলেন যারা আমার ইন্টারভিউ নেওয়ার পরেও ছাপেন নি কারন আমি তাদের “গসিপ সাপ্লাই” দিতে পারিনি... নিজে এক্স জারনালিস্ট হয়েও ইয়েলো জারনালিজম আমার কাছে অপরিচিত ছিল কিন্তু মুম্বাইকে সবে চেনা শুরু করেছিলাম...

লুটেরা ডেবিউ এর পরে বিভিন্ন বড় নামকরা মহল থেকে ডাক পেয়েছিলাম কিন্তু আমার ছাপোষা মধ্যবিত্ততাকে ছাপিয়ে উঠতে আর পারলাম না। প্রতিদিন বেশ তৈরি হয়ে, প্রফুল্ল চিত্তে বেরতাম বিভিন্ন মিটিং এর জন্য আর মন খারাপ করে বাড়ি ফিরতাম। আমার অভিনেতা বাবা অনেক বছর আগে আমাকে একটি উপদেশ দিয়েছিলেন যখন আমি ওনাকে প্রথম জানালাম ‘আমি অভিনয় কে পেশা হিসেবে বেছে নিতে চাই...’  উনি বলেছিলেন... “যে কাজ করতে মন সায় দেবে না জানবে সেটা করার দরকারও নেই”। পরভিন দাব্বাসের বিপরীতে একটা ছবি করলাম “যব তুম কহো”- ছবিটা একেবারেই চলল না। আনুরাগ বাসুর “টেগোর স্টোরি” তে কাবুলিওয়ালায় কাজ করলাম। অনেক প্রশংসা পেলাম। স্ক্রিনে অভিনয়ের পাশাপাশি ডাবিং করতাম প্রচুর। কিন্তু ফিল্মের প্রতি আমার ভালবাসা শুধু অভিনয়ে আটকে থাকেনি শিক্ষকতার মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেছে আমার মতো আরও বহু ছোট শহরের স্বপ্নের কাছে। 


১৫ থেকে আমার অভিনেতা তকমা স্নাতক হল অ্যাক্টিং ফ্যাকাল্টি হিসেবে, প্রথমে একতা কপুরের “ইন্সটিটিউট অফ ক্রিয়েটিভ এক্সিলেন্স” তারপরে সুভাষ ঘাই স্যারের “হুইস্লিং ঊডস ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট”--  অভিনয় করার পাশাপাশি অভিনয় পড়ানো এর মত ভালো যুগলবন্দী আর হয়না। ছাত্র ছাত্রীদেরকে শেখানোর পাশাপাশি ওদের থেকেও শিখেছি অনেক কিছু। প্রথম যেদিন টিচার্স ডে তে কৃতজ্ঞতার হাতগুলো আমায় প্রণাম করল সেদিন চমকে উঠেছিলাম, জানিনা আমি এর কতটা যোগ্য কিন্তু ...আমিও ত একদিন ওদেরই জায়গায় ছিলাম। “ইন্সটিটিউট অফ ক্রিয়েটিভ এক্সিলেন্স”-এর পরে “হুইস্লিং ঊডস ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউটে অভিনয় পড়ানোর পাশাপাশি সুভাষ ঘাই স্যারকে অ্যাসিস্ট করাও শুরু করলাম। এবং মুক্তা আর্টস এ স্টোরি ডিপার্টমেন্টে প্রথমে ক্রিয়েটিভ এক্সিকিউটীভ হিসেবে ও পরে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ শুরু করলাম, ঝুলিতে আরেকটা টাইটেল। কলকাতায় থাকাকালীন আমার জারনালিজম ও স্ক্রিপ্ট রাইটিং আর প্রোডাকশন হাউজে কাজের অভিজ্ঞতাটাও স্নাতক হল, ফিল্ম বিসনেসের সাথে পরিচয় ঘটলো সরাসরি। ক্যামেরার পেছনের কারসাজির সাথে পরিচয় ইন্সিটিউটে থাকতেই হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মুক্তা আর্টসে কাজ করার এবং লিভিং লেজেন্ড সুভাষ ঘাই এর থেকে সরাসরি শিখতে পারা একটা লাইফটাইম এক্সপিরিয়েন্স। এরই মধ্যে পরিচালক সঞ্জয় নাগ এর “গুডমর্নিং সান সাইন”

আমি মুম্বাইকে শুধুমাত্র কাজ আর ফিল্মের গোনাগুনতিতে আটকে রাখতে চাইনা, আমার অন্যতম প্রিয় শহর আমাকে প্রফেশনাল সম্মান এর থেকেও অনেক বেশি উপহার দিয়েছে। বহু মানুষকে দেখেছি স্বপ্নের গোলাপি ফানুস ফুট তেই এ শহরকে গাল দিতে শুরু করে। আমি মুম্বাইকে আজও ততটাই ভালোবাসি যতটা প্রথম দিন বাসতে শুরু করেছিলাম, কোথাও বোধহয় কলকাতার থেকে একটু বেশিই! পরিবার থেকে দূরে, বন্ধুহীন শহরে শুধু স্বপ্নসম্বল নিয়ে শুরু করা এই সফর কত কিছুই না দেখিয়েছে। শিখিয়েছে জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ! শিখিয়েছে বাড়ির বিল ভরতে হলে স্বপ্নকে অনেকসময় হোল্ডে রাখতে হয়.. বা “পরের ফিল্ম কবে রিলিজ হচ্ছে”-র সামাজিক চাপ সামলে কছুয়া আর খরগোশের অসম লড়াইতে স্পোর্টস ম্যান স্পিরিট কিভাবে মেন্টেন করে যেতে হয়। শিখেছি জীবনে ২৬/১১-র আচমকা হামলা স্বত্তেও কিভাবে পরদিন ফুসফুসে সাহস ভরে লোকাল ধরতে ছুটতে হয়!

--- স্বচ্ছতা সঞ্জীবন গুহ


Wednesday, 17 May 2017

কাব্য কপচাই ১

থপ থপিয়ে দিন চলেছে , দপ দপিয়ে শাম ... বুলবুলিতে ধান খেয়েছে চিয়ার্স বলে জাম...!! দুক্ষু কালে সম্বল সেই জাবর কাটা কাব্য তবু খুশহালে আমি বাপু হানি সিং কেই ভাবব । চাওয়া পাওয়ার জমাট গ্রেভি , টানেল টাও লম্বা হেভি লাইফ জুড়ে কি ফুরফুরে ঘুট ঘুটে আন্ধেরা । হেঁটে তবু মরি আমি , বুলেট রাজা র কথা দামি বলেছে নায়িকা খেয়ে হামি “সামনে হ্যায় সভেরা” । ফের গিজগিজে এই ভিড়ের ভাঁজে , ব্যাপক শকুন্তলা সাজে নামি আমি ক্যায়া আন্দাজে , বেঁধে বিনুনি । তিনকা তিনকা স্বপ্ন ভাঙ্গে জোয়ার ভাঁটা মরা গাঙে খুন পসিনা ফ্লেভারড ভাঙ-এ , রচি মম ফাল্গুনী ।

Friday, 12 May 2017

শুরুয়াত ... 

অনেক বছর বাদে বাংলায় লেখা পোস্ট করছি , যেটা সবাই পড়তে পারবে। বাংলায় লিখতে পারাটা  আমার কাছে ঢেঁকুর তোলার মতই  স্বস্তির। একবার  কলেজে  পড়ার সময় একটা বিউটি কনটেস্ট
-এ  নিজের সম্পর্কে বলেছিলাম " বাংলায় কথা বলতে ভালোবাসি " -- বলা বাহুল্য সেকেন্ড হয়েছিলাম !  
সেদিন বুঝেছিলাম কিছু জায়গায় আঁতলামো গুলোকে পকেটে চাপাই ভালো।

ব্লগ শুরু করতে গিয়ে মনে হয়েছিলো ইংরাজি তেই করি সবাই পড়তে পারবে কিনতু বাংলা ভাষা আন্দোলন এর  ঘাউড়ামি চাড়া দিল ...


প্রিয় পৌলমী দি…

প্রিয় পৌলমী দি … সে অনেককাল আগের কথা -তখন ইয়াহু আর রেডিফ মেল এর জমানা, নতুন নতুন ইন্টারনেট এর চলন আর ইয়াহু মেসেঞ্জার এর চ্যাট বাক্স তো...